চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলার আসামি সৈয়দ আহম্মেদ প্রায় ২০ বছর ধরে পলাতক। ১৪ বছর আগে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। তবে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে কখনো বাবুচি, কখনো দারোয়ানের ছদ্মবেশে থাকছিলেন তিনি। শেষ রক্ষা আর হয়নি।

ধরা পড়েছেন র‌্যাবের হাতে।
মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম সৈয়দ আহম্মেদ (৬০)। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭।

গতকাল শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে ২০০১ সালের নভেম্বর থেকে ২০০২ সালের মার্চের মধ্যে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় মাহমুদুল হক ও তাঁর বড় ভাই ব্যবসায়ী জানে আলমকে খুন করা হয়। দুই মামলার এজাহারেই আসামির তালিকায় সৈয়দ আহম্মেদের নাম ছিল। এর মধ্যে জানে আলম হত্যা মামলায় ২০০৭ সালে সৈয়দ আহম্মেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালতে সৈয়দ আহম্মেদসহ ১০ জনের ফাঁসির রায় বহাল থাকে।

এম এ ইউসুফ বলেন, জানে আলমকে হত্যার পর সৈয়দ আহম্মেদ বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে কিছুদিন উপকূলীয় এলাকায় এবং পরে সীতাকুণ্ডে অবস্থান করেন। পরিচয় গোপন রাখতে দুটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করিয়ে নেন। একসময় সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে ছিন্নমূল নেতা মশিউরের ছত্রচ্ছায়ায় বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন মাজারে বাবুর্চির কাজ করতেন। পরে আকবর শাহ এলাকায় একটি ভবনে দারোয়ানের কাজ নেন। সেখানকার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মাহমুদুল হককে খুনের পর বাঁশখালী উপজেলায় আত্মগোপন করেছিলেন সৈয়দ আহম্মেদ। সেখান থেকে জলদস্যুদের সঙ্গে সমুদ্রে চলে যান। চার মাস পর লোহাগাড়ায় ফিরে এসে মাহমুদুলের বড় ভাই জানে আলমকে হত্যায় অংশ নেন। ছোট ভাইয়ের হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন জানে আলম। তিনিই মামলা পরিচালনা করছিলেন। তাই আসামিদের ধারণা ছিল, জানে আলমকে খুন করতে পারলে মামলা আর এগোবে না।

গ্রেপ্তার সৈয়দ আহম্মেদের বাড়ি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ গ্রামে। র‌্যাব জানায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ আদালতে সাক্ষী দেওয়ার আগে আনুমানিক সকাল ৯টায় স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী ও সৈয়দ বাহিনী জানে আলমকে (৪৮) এক বছরের শিশু সন্তানের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শেষে গুলি করা হয়। ওই দিন জানে আলমের বড় ছেলে মো. তজবিরুল আলম বাদী হয়ে সৈয়দ আহম্মেদকে অন্যতম প্রধান আসামি করে ২১ জনের নামে লোহাগাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

এর আগে ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর নিহতের ছোট ভাই মাহমুদুল হককেও ওই বাহিনী একই কায়দায় হত্যা করে। ওই ঘটনায় লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়। জানে আলম হত্যা মামলায় আদালত ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১২ জনকে ফাঁসি ও আটজনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।

কলমকথা/রোজ